অর্ধশতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলের জ্ঞানপিপাসুদের মাঝে জ্ঞানের উচ্চতর ধাপ উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে অদম্য মনোবল ও অসীম সাহস নিয়ে এসেছিলেন কতিপয় ব্যক্তি। যার নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম অধ্যাপক আবদুল জব্বার। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় এবং স্থানীয় দানবীর, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবীদের আন্তরিক সহযোগিতায় ১৯৬৪ সালের ১লা জুলাই বর্তমান লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের যাত্রা সূচিত হয়। অল্প দিনেই কলেজটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। ফলে কলেজের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখা ও স্নাতক শ্রেণিতে বি.এ, এম.কম শাখায় অনুমোদন লাভ সেহজতর হয়।
মরহুম আলহাজ মদিন উল্যাহ চৌধুরীর এক একর ২০ শতাংশ ও মরহুম আবদুল মতিন মাস্টারের এক একরের কিছু বেশি জমির উপর কলেজের প্রথম টিন শেড ঘরটি নির্মিত হয়। পরবর্তীতে স্বর্গীয় রাজকুমার দাশ, মরহুমা জেবুরী বেগম, মরহুম হাজী শাহ আলম, মরহুম হোসেন আহম্মদ কবির ও কলেজের প্রাক্তন এম.এল.এস.এস মরহুম আবুল খায়ের-এর কিছু জমি কলেজের চৌহাদ্দির আওতাধীন চলে আসে। এ জমিগুলোর কিছু অংশ খরিদ করা হয়। ১৫০ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী নিয়ে যাত্রা শুরু করা কলেজটির বর্তমান জমির পরিমাণ ৮ একর ৬৩ শতাংশ। সূচনা লগ্নে যে সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা কলেজের জন্য নিবেদিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে স্বর্গীয় প্রিয়লাল বাবু, হিমাদ্রী শেখর মুখোপাদ্যায়, স্বর্গীয় গিরিশ বাবু, জনাব শাহ আলম, জনাব চৌধুরী খুরশিদ আলম, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন, আদিনাথ বাবু, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ননী গোপাল ঘোষ, অধ্যাপক খলিলুর রহমান চৌধুরী, জনাব রফিকুল্লাহ, রাজেন্দ্র বাবু (ইংরেজি শিক্ষক ও হিসাব রক্ষক) আবদুল মতিন মাস্টার (অফিস ক্লার্ক) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজের বহু ছাত্র সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতা উত্তরকালে কলেজের ভৌত অবকাঠামো দ্রুত উন্নয়ন ও বিস্তার লাভ করে। এতে কলেজের পরিসর আরো বিস্তৃত হয় ১ মার্চ, ১৯৮০ সালে জাতীয় করণের ফলে অগ্রগতির এ ধারা আরো গতিশীল হয়, যার ফসল আজকের অনার্স-মাস্টার্স কলেজ। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ দশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর। ১৯৯৫ সালের পর পর্যায়ক্রমে ৮টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলাম শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত। ২০০০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স এবং ২০০৫ সালে উক্ত বিষয়গুলোতে প্রিলিমিনারি কোর্স চালু হয়। এছাড়া ২০১৩ সালে হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলাম শিক্ষা ও গণিত বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। একই বছর বাংলা, ইংরেজী ও রসায়ন বিভাগে অনার্স কোর্স চালু হয়।
বিশালাকার চারটি ত্রিতল ভবনের সমন্বয়ে কলেজ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। দক্ষিনমুখী ভবনটি প্রশাসনিক ও কলা ভবন; তার পশ্চিমে লাইব্রেরি ভবন: পূর্বমুখী উত্তরের ভবনটি বানিজ্য ভবন ও পশ্চিমে বিজ্ঞান ভবন। ভবনগুলোতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ টি কক্ষ রয়েছে। আরে দুটি ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, যার একটি প্রায় সমাপ্ত। এছাড়া কলেজে ১০০ সিটের একটি ছাত্রীনিবাস, ২০ ও ৩০ সিটের দুটি ছাত্রাবাস এবং রেড ক্রিসেন্ট, বি.এন.সি.সি, রোভার স্কাউট ও গালর্স ইন রোভার ইউনিট রয়েছে। কলেজের প্রবেশ মুখে জেলার প্রথম শহীদ মিনার, সুদৃশ্য তোরণ ও ঝাউগাছের সারি কলেজের সৌন্দর্যকে বহুগণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিনোদনের পৃথক কমনরুম, সুপরিসর সাইকেল স্ট্যান্ড, বিস্তৃত খেলার মাঠ, বিশাল দিঘি ও অসংখ্য গাছ-গাছালির সুশীতল ছায়া। এ কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রম (শিক্ষাসফর, ওরিয়েন্টন ক্লাস, নবীনবরণ, বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য সপ্তাহ, জাতীয় দিবসসমূহ, ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা:), বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নাটক মঞ্চায়ন, বাংলা বর্ষবরণ প্রবৃত্তি যথাযোগ্য মর্যাদা ও আড়ম্বরের সাথে উদযাপন করা হয়।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ জাতিগঠনে তার অবধান আরো বিস্তৃত ও গতিশীল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।